নদীতীরে সূর্যাস্ত







গোধূলি আবিরে রাঙা অস্তায়মান লাল সূর্য । দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্মকোলাহল । প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি । পশু – পাখি নীড়ে ফিরে যেতে থাকে । সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শুরু হয় শ্রান্ত মানুষের ঘরে ফেরার পালা। চরাচরে সর্বত্রই বিরাজ করে এক নৈসর্গিক নীরবতা । সূযের রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজায় ।


নদীর তীরে দাঁড়ালে সূর্যাস্তের এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায় । বিস্তৃত নদী তীর, সামনে কল্লোলিত নদী,স্বর্গীয় আভায় রঞ্জিত আকাশ –এই শোভা ,এই অপরূপ রূপের মাধুরী দেখে দু চোখের তৃষ্ণা যেন মেটে না ।বিশ্বস্রষ্টা যেন নিজেকে আড়ালে রেখে মোহময় মৌন্দর্যের মধ্যে মানুষকে ডুবিয়ে রেখেছেন।রহস্যময় এক মায়ার জগৎ সৃষ্টি করে খেলছেন আড়ালে বসে।সূর্যাস্তের সময় নির্জন নদীতীরে দাঁড়ালে এমন অধ্যাত্ন–ভাবনা ভেসে আসে মনে।নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার কিছু চরণ :


‘সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা


আঁধারে মলিন হল,যেন খাপে ঢাকা


বাঁকা তলোয়ার ।’


দিবসের আগমন আর রাত্রির আগমনের এই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে পৃথিবী যেন মিলন–বিরহের খেলায় মেতে ওঠে।আকাশ আর মাটি যেন মুখোমুথি মৌনমুখর ।সে অপার্থিব মৌনতা ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ চরাচরে নদীবক্ষে,পর্বতে ,অরণ্যে।ছায়াঢাকা গ্রামের নিবিড় প্রেক্ষাপটে সূর্যাস্তের দৃশ্য ঘোমটা–টানা লাজুক বধূর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ।


নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখতে গেলে বহুমাত্রিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে । সামনে বিশাল জলরাশি,ওপরে রক্তিম উদার আকাশ,গোধূলি লগ্নে উন্মুক্ত নদীতীরে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।



আকাশের রক্তিম রঙে নদীর পানি রঙিন হয়ে ওঠে।এ সময় দিগন্তে দ্রুত রং বদলাতে থাকে।অস্তগামী সূর্যের লাল টিপ কপালে পরে পৃথিবী যেন নববধূর মতো সাজে।ঝিলিমিলি ঢেউখেলানো সোনারংঙের পানিতে।


পালতোলা নৌকা ভেসে চলার দৃশ্য অপূর্ব লাগে।নদীর তীর ঘেঁষে বাতাসের স্রোত সাঁতরে উড়ে চলে সাদা বক,গাঙচিল,বালিহাঁসের ঝাঁক।রক্তিম সূর্য তার উষ্ণতা বিলিয়ে লাল হতে হতে নিচে নামতে থাকে।এক সময় মনে হয় নদী আর আকাশ যেন মিশে গেছে দিগন্তরেখায় ।সূর্য যেন কান পেতে শুনছে পৃথিবীর গোপন বিষাদের সুর ।


তারপর সেই অগ্নিগোলক যেন নদীর বুকে টুপ করে ডুবে গেল ।আঁধার কালো চাদর আচ্ছন্ন করল চারদিক।চরাচরে ঝিঁঝির শব্দ,জোনাকির টিপটিপ আলো,ঝিরঝির বাতাসে সৃষ্টি হয় নতুন এক আবেশ।কখনো সন্ধ্যাকে মনে হয় যেন গ্রামের কিশোরী মেয়েটি,লাল-হলুদ ডুরে শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নদীতীরে।পর মৃহূর্তেই মনে হয়,এ তো নিছক কল্পনা মাত্র ।


অস্তায়মান সন্ধ্যার আবছা আঁধারে নদীর ছোট ছোট ঢেউয়ের ওপর বিচূর্ণ আলোর কারুকাজ সত্যিই বিস্ময়–জাগানিয়া।ইচ্ছে হয়,সেই ঢেউয়ের কারুকাজে একটু হাত রাথি ‍ছুঁয়ে দেখি আলোকছায়ার বিচিত্র লুকোচুরি।ঘনায়মান সন্ধ্যার অপরূপ রূপের মাধুয ধরে রাখি হৃদয়ে ।কিন্তু বাস্তবে তা যে হবার নয়।রক্তিম আকাশ আর বিশাল নদীর প্রেক্ষাপটে সূর্যাস্তের বিচিত্র শোভা শুধু মনের পর্দায় চিরকালের আাঁকা ছবির মতো ভাস্বর হয়ে থাকে ।এক শাশ্বত অনুভূতির হৃদয় মন ভরে ওঠে

Comments